লাইভ টেলিভিশন২৪ প্রকাশিত: ১৮ আগস্ট , ২০২২ , ২২:৪৩ পিএম
পোশাকের কারণে নরসিংদী রেলওয়েতে নারীর ওপর যৌন হয়রানির ঘটনায় আদালতের ‘পর্যবেক্ষণ’কে নারীবিদ্বেষী উল্লেখ করে তা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন ৫০ জন নারীবাদী অধিকারকর্মী।আজ বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে তারা এই দাবি জানিয়েছেন।বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “গত ১৮ মে নরসিংদী রেলস্টেশনে ঢাকার ট্রেনের জন্য অপেক্ষারত এক নারীকে পোশাকের কারণে যৌন হেনস্তা করার ঘটনায় অভিযুক্ত নারীকে জামিন শুনানির সময় আদালত ওই তরুণীর পোশাককে দৃষ্টিকটু বলে নারীবিদ্বেষী মন্তব্য করেছেন। জামিনের পক্ষের আইনজীবী মো. কামাল হোসেন গণমাধ্যমের কাছে জানান যে, ‘আদালত তার পর্যবেক্ষণে বলেছেন, গুলশান–বনানীর মতো এলাকায়ও কোনো মেয়ে এ ধরনের পোশাক পরে রাস্তায় বের হয় না। সেখানে গ্রামের মতো একটি জায়গায় পাবলিক প্লেসে এ রকম পোশাক পরা স্বাধীনতা হতে পারে না। যেমন খুশি তেমন পোশাকের নামে আমাদের সোসাইটির কালচারকে ধ্বংস করতে পারে না। ওই মেয়ে যে ধরনের পোশাক পরিহিত ছিল সেটা আমাদের দেশের সামাজিক অবস্থার সঙ্গে বেমানান। যে কারণেই প্রতিবাদের শিকার হয়েছিল।’
এতে আরও বলা হয়, ‘গণমাধ্যমে প্রকাশিত আদালতের এই অসাংবিধানিক এবং অগণতান্ত্রিক পর্যবেক্ষণের বিরুদ্ধে আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। দেশের সংবিধানের ২৮ ধারা অনুযায়ী নারীর প্রতি রাষ্ট্র কোনোক্ষেত্রে বৈষম্য তৈরি করতে পারবে না এবং নাগরিক হিসেবে নারী সকল ক্ষেত্রে সমান অধিকার পাবে। তাছাড়া জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালা এর ১৪ নং পৃষ্ঠায় নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক আইন প্রণয়ন না করা এবং বৈষম্যমূলক সামাজিক প্রথার বৃদ্ধি হ্রাস করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু নরসিংদীর ওই ঘটনায় অভিযুক্তের জামিনের পক্ষে থাকা আইনজীবীর বরাত দিয়ে আদালতের যে পর্যবেক্ষণ প্রকাশিত হয়েছে, তাতে নারীর পোশাকের কারণে নারীর প্রতি যৌন সহিংসতাকে পরোক্ষভাবে বৈধতা দেওয়া হয়েছে এবং স্বাধীনতার প্রশ্নে নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ দেখানো হয়েছে, যা বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে নারীর সাংবিধানিক এবং গণতান্ত্রিক অধিকারকে ক্ষুণ্ণ করে।’
‘এই পশ্চাদপদ ধারণাপুষ্ট পর্যবেক্ষণটি জনপরিসরে নারীর প্রতি নির্যাতনকে বৈধকরণ এবং অতি স্বাভাবিকীকরণ করে তুলবে। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বিচারব্যবস্থায় এ ধরনের নারীবিদ্বেষী চিন্তা ও বক্তব্য বাংলাদেশের আপামর নারীসমাজের জন্য গৃহীত উন্নয়নের নীতিমালা এবং কার্যক্রমকে আরও এক ধাপ পিছিয়ে দেয়। এর ফলে নাগরিক হিসেবে নারীর প্রতি রাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গি কতটুকু সংবেদনশীল তা নিয়ে স্বভাবতই আমাদের প্রশ্ন জাগে। আমরা আইনজীবীর থেকে প্রাপ্ত আদালতের এই পর্যবেক্ষণ প্রত্যাহারের দাবি জানাই। আমরা মনে করি, রাষ্ট্রের বিচারব্যবস্থায় এমন কোনো অসংবেদনশীল ব্যক্তির পদে থাকার দরকার নেই, যিনি এই ধরনের বিদ্বেষপূর্ণ মতামত দিয়ে বাংলাদেশের নারীদের চলাচল এবং জীবনযাপনের স্বাধীনতার প্রশ্নকে হুমকিতে ফেলে।’